কবিতা 

মদসংখ্যা- মদ, বমি ও নদীর গল্প ।। অং মারমা

লাব্রেঅং। ছোটবেলা থেকে সে সেলুনে চুল কাটাতে পারেনি। এই দুঃখটা সে অনেকবারই তার মা কে জানিয়েছে। আর মা জানিয়েছে তার বাবাকে। তার বাবা টাকার খরচ ভয়ে কাউকে জানাতে পারেনি। বহুদিন বাদে আজ প্রথম তার বাবা তাকে নিয়ে সেলুনে গিয়ে চুল কাটাবে। ছেলে বড় হয়েছে। ইস্কুলে পড়তে যাবে। তাকে ত আর আগের মত করে ব্লেডে টাক্কু মাথা করে ছেড়ে দিলে চলবে না। তাকে নিয়ে হাসাহাসি আর বিদ্রুপের ঝড় পড়বে সারা ইস্কুলে। আর সেই ঝড়ে ছেলে একাই ভিজবে না। সাথে যে তার মাথাটাও ভিজবে। দারিদ্রতার ও ত একটা সীমা থাকা দরকার। এই দিক দিয়েও বাপ আর সন্তানের মধ্যে কেমন একটা সম্পর্ক। যে বাপের টাকা বেশি তার সন্তানের আদর যত্নাদিও একটু বেশি। যে বাপের টাকা নাই তার সন্তানের গাল টেপে আদর করার লোকের কথা তো ফেলে দাও তার মায়ের দেয়া নাম ধরেও ডাকার লোক অভাব হয়ে যায়। লাব্রে কে লাব্রে ডেকে তার বন্ধুরা যত তৃপ্তি পাই তার থেকেও পাই খ্যবুং নামে ডেকে। লাব্রে’র বাবা ছিলেন শ্রমজীবি। মানুষের বাগানে কাজ করে, গাছ টেনে সংসার রক্ষা করে আসছেন। মংছাই। এলাকাই মদারু মংছাই নামেই সমধিক পরিচিত সে। মদ যে খুব বেশি একটা খেতে পারে এমনও না। অল্প একটু মদ খেলে গালিগালিতে ভরে ফেলত তার মুখ। যার তার সাথে রাস্তাই ঝগড়াই জড়িয়ে যেতে পছন্দ করত সে। আর ঘরে এলে বউ পেটানোর আনন্দে সে বমি করত উঠোনে বেড়ে উঠা আম গাছের তলে। আর তার বমি খেয়ে খেয়ে অনেক প্রজন্ম কুকুর তার বাড়িতে থেকেছে। আবার অনেক কুকুরও খেতে না পেরে বিদায় হয়েছে। লাব্রে একদিন লবন মুখে দিয়ে দাঁত মাঝতে মাঝতে সেই আম গাছটার তলে এসে দাঁড়িয়েছিল। দেখল, গত রাত্রের তার বাপের বমি কুকুরের পেটে চালান হয়ে নাই হয়ে গেছে। কিন্তু সেই নাই বমিয়ের গন্ধ এখনো মৌ মৌ করে লেগে যাচ্ছে নাকে আর গায়ে। ভাবে সে, আমিও বড় হয়ে মদ খাবো। কিন্তু আমার বাপের মতন করে নয়। মহাজনদের মত…

Related posts